আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: মাত্র চার মাসের ফসল। বছরে ফলন পাওয়া যায় তিনবার। এতেই কৃষকের ঘরে ঢোকে লক্ষ লক্ষ টাকা। বিশেষ করে লাভ বেশি হওয়ায় লালমনিরহাটের কৃষকরা এখন কুল চাষে ঝুকেছেন৷ তাই বছর বছর বাগান বাড়ছেই।
কুলে কপাল খুলছে লালমনিরহাট জেলার ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার কৃষকদের। কুলেই জীবন বদলের স্বপ্ন দেখছেন তারা।
প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আগে সেখানে বছরের পর বছর ধরে হাজার হাজার বিঘা জমি অনাবাদি পড়ে থাকতো।
মৌসুমি ফসল ছাড়া সে অর্থে সেখানে কোনো চাষাবাদই হতো না। সেই লালমনিরহাটে এখন কুল চাষ করে বিপ্লব ঘটিয়েছেন কৃষক।
অন্যসব ফসল উৎপাদনে ব্যর্থ হলেও কুল চাষে সফল হয়েছেন চাষিরা। লালমনিরহাটে এখন পেঁয়াজ, রসুন, মসুর, গম, সরিষা, আখ ও শাকসবজির পাশাপাশি আপেল, বাউ ও থাই জাতের কুল চাষ করা হচ্ছে।
শীত থেকে গরমের শুরু অবধি সময়টা দেশি ফলের অভাব মেটায় প্রধানত দেশি কুল বা বরই। বাজারে টক-মিষ্টি গোল বরই ও নারকেল কুলের পাশে আপেল কুল এবং বাউকুল আছে স্বাদ মেটাতে। দাম হাতের নাগালেই।
পুষ্টিবিদরা বলেন, কুলে আছে প্রচুর ভিটামিন আর খনিজ উপাদান। এটি দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্যসহ অন্য হজমজনিত সমস্যার সমাধান করে। ক্ষুধাবর্ধক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া আরও অনেক গুণ রয়েছে।
অন্যসব ফসল উৎপাদনে হিমশিম খেতে হয় লালমনিরহাটের কৃষকদের। সেই লালমনিরহাটেই কুল চাষে সফল হয়েছেন চাষিরা। তাই কুল চাষে আত্মনিয়োগ করেছেন শিক্ষিত বেকার যুবকও। পরিত্যাক্ত জমিতে কুল চাষ করে আর্থিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছেন তারা। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় যতই দিন যাচ্ছে কুলের আবাদ ততই বাড়ছে।
এই লালমনিরহাটে কুল চাষ করে বর্তমানে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন অনেকে। লালমনিরহাটে যে সোনার ফসল ফলানো যায়, তা প্রমাণ করছেন এই শিক্ষিত বেকার যুবকরাই।
কুলচাষিরা জানান, বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ৪০হাজার টাকা। গড়ে বিঘা প্রতি প্রায় দেড়শ মণ করে ফলন হবে বলে আশা করছেন।
বর্তমানে বাজারে পাইকারি ২হাজার টাকা মণ দরে বাউকুল বিক্রি হচ্ছে। এতে ৫০টাকা কেজি পড়ছে৷ তবে খুচরা বাজারে কুল বরই ৬০ থেকে ৭০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ, বিক্রি হচ্ছে ২হাজার ৪শত টাকা থেকে ২হাজার ৮শত টাকা দরে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছেন, সাধারণত লালমনিরহাটে এ ধরনের কুল বা আম চাষের জন্য উপযোগী। তাই লালমনিরহাটে কুল চাষ বেশি চাষ হচ্ছে।
কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় শিক্ষিত বেকার যুবকরা কুল চাষে ঝুঁকেছেন। এতে কুল চাষে নীরব বিপ্লব ঘটে গেছে। প্রতি বছরই বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। আর তাদের চাষবাসের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করছে জেলা কৃষি অফিস। অল্প চাষে বেশি উৎপাদনের ব্যাপারে আগামীতে আর নতুন জাত উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে।
তাহলে অন্য ফসলের পাশাপাশি কুল চাষ করেও স্থানীয় চাষিরা আরও লাভবান হতে পারবেন।